এপ্রিলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারও নতুন দিগন্ত ছুঁয়েছে। প্রবাসীরা চলতি মাসে দেশে পাঠিয়েছেন ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, শুধু ৩০ এপ্রিলেই দেশে এসেছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পুরো এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩৪.৬ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে এসেছে মোট ২,৪৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যেখানে গত অর্থবছরে এই অঙ্ক ছিল ১,৯১১ কোটি ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ২৮.৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, ঈদের পরও এই ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত মার্চে দেশে এসেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স—৩২৯ কোটি ডলার। এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে, ব্যাংকিং চ্যানেলের ওপর প্রবাসীদের আস্থা ফিরছে, এবং অবৈধ হুন্ডি পদ্ধতির ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রণোদনা, হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি, এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠানোর সহজ প্রক্রিয়া এই বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এছাড়াও, প্রতি ডলারে স্থিতিশীল ১২২ টাকার বিনিময় হার এবং রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেমিট্যান্স বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
এক সময় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮০৬ কোটি ডলার (২০২২ সালে), যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২০৩৯ কোটি ডলারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন রিজার্ভ বাড়াতে বাজার থেকে ডলার কেনার নীতিতে ফিরে গেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, চলমান রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স চিত্র:
- মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার
- এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার
- ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার
- জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার
- ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার
- নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার
- অক্টোবর: ২৩৯ কোটি ডলার
- সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি ডলার
- আগস্ট: ২২২ কোটি ডলার
- জুলাই: ১৯১ কোটি ডলার
এই শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে বলে আশা করা যায়।