পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে পিপিপির মানবাধিকার সেলের সভাপতি ফারহাতুল্লাহ বাবর বলেন, পাকিস্তানে সাংবাদিকতা এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভয়ভীতির পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে।
বাবর বলেন, ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাকিস্তান বর্তমানে সেই ৪২টি দেশের অন্তর্ভুক্ত যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে, অথবা সাংবাদিকতা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পেশা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের র্যাংক আরও নিচে নেমে ১৫৮-তে পৌঁছেছে, যা একে আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের মতো সংকটময় দেশের সমপর্যায়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, “এই অবস্থান আমাদের জন্য লজ্জাজনক। ফিলিস্তিনে যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী গত ১৮ মাসে প্রায় ২০০ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে, পাকিস্তানকেও একই রকম দায়িত্বহীনতা ও সহিংসতার ছায়ায় দেখা যাচ্ছে।”
পিপিপি নেতা আরও বলেন, ২০২৫ সাল সাংবাদিকদের জন্য দুঃখজনকভাবে শুরু হয়েছে। বছরের শুরুতেই ‘প্রিভেনশন অব ইলেকট্রনিক ক্রাইমস অ্যাক্ট’ (পেকা) সংশোধনের মাধ্যমে অনলাইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, হয়রানি ও বিচারিক অপব্যবহার শুরু হয়েছে। এই কাজে এফআইএ (ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
ফারহাতুল্লাহ বাবর রাজনৈতিক দল ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, পেকা আইনের ৫৩ নম্বর ধারা বাস্তবায়নে তারা যেন সক্রিয় হন। ওই ধারা অনুযায়ী, এফআইএকে ছয় মাস অন্তর তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংসদে প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করার বিধান রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, “যেহেতু এফআইএকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা হচ্ছে না, তাই তারা সাংবাদিকদের নির্যাতন ও অপমানের সুযোগ পাচ্ছে। এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।”
পিপিপির মানবাধিকার সেল আরও অভিযোগ করেছে, সংবাদমাধ্যমের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমকে বিজ্ঞাপন না দিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, বিশেষত সেসব গণমাধ্যম যারা সরকারি সত্য বা বর্ণনাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে না।
ফারহাতুল্লাহ বাবর বলেন, “এই ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সংবাদমাধ্যমকে আরও দুর্বল করে তুলছে এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পাচ্ছে।”
তিনি সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান যাতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।