বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই বিপরীত মেরুর দুই উত্তরসূরির নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক আবারও চরমে। একদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি নির্বাসিত জীবন কাটিয়েও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি সম্প্রতি মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশে ফিরতে না পারলেও তিনি ব্রিটেনে ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’ ভিসায় বসবাস করছেন। ব্রিটিশ নাগরিকত্বের সুযোগ থাকলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারেক রহমানের এই অবস্থান দেশপ্রেমের উদাহরণ। বিদেশি পাসপোর্টের পরিবর্তে দেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখা তার রাজনৈতিক ও আত্মিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
২০০৭ সালে যখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়, তিনি বলেছিলেন, “আমি এই দেশের মাটি ছেড়ে কোথাও যাবো না।” তারেক রহমানের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব না নেওয়া যেন সেই উত্তরাধিকারেরই বহিঃপ্রকাশ।
অপরদিকে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, জয় আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে তার এই সিদ্ধান্ত জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নাগরিকত্ব গ্রহণ কি নিছকই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, নাকি রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত?
জয়ের সমর্থকদের মতে, তিনি ছোটবেলা থেকেই আমেরিকায় বসবাস করেছেন এবং সেখানেই পড়াশোনা, পরিবার গঠন এবং পেশাগত জীবন শুরু করেছেন। তাই নাগরিকত্ব নেওয়া তার জন্য একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ। তবে সমালোচকদের মতে, মায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে দেশে লাভবান হয়েও নাগরিকত্ব পরিবর্তন একটি স্বার্থপরতার প্রতীক।
জনমনে প্রশ্ন: দেশপ্রেম বনাম সুবিধাবাদ
একদিকে তারেক রহমানের প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখা, অন্যদিকে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর পরই সজীব ওয়াজেদ জয়ের মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ—এই দুই বিপরীত অবস্থান জনমনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নাগরিকত্ব গ্রহণ ব্যক্তিগত অধিকার হলেও প্রশ্ন উঠেছে সজীব ওয়াজেদ জয় কি আসলেই দেশের মাটির প্রতি দায়বদ্ধ?