ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতানিয়াহু, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তীব্রতর

✍️ প্রতিবেদক: দীপ্ত বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মোড় নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত হামলায় যুক্ত করতে চায় ইসরায়েল।

ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। ভূমধ্যসাগরে রণতরী মোতায়েনসহ অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময়) জানান, “ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, তা আদৌ হবে কি না, এখনো নিশ্চিত নয়; এ প্রেক্ষাপটে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, সেখানে (ইরানে) যাওয়া (অভিযান চালানো) উচিত হবে কি না।”

এ ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। ইরান ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মিসরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একই সঙ্গে ইরান গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, ইরানের সব ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো সম্ভব হয়নি এবং বুধবার রাতের হামলাকে ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে অভিহিত করেছে।

ইরান বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা, বিরশেভাসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল আবিবে ছিল সবচেয়ে বেশি হামলা। ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের বিরশেভা প্রযুক্তি পার্ক, মাইক্রোসফটের কার্যালয় এবং সামরিক শাখা লক্ষ্যবস্তু হয়। রেলস্টেশন ও প্রযুক্তি পার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শুক্রবারও ইরান ইসরায়েলে নতুন করে হামলা চালায়। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানায়, ইরান থেকে ৩৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে, যার মধ্যে চারটি আঘাত হানে নির্দিষ্ট এলাকায়।

তেহরানে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। আইডিএফ জানায়, ৬০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সরকারি ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এতে একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একজন ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। বিবিসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইসরায়েল এক সপ্তাহে তেহরানে ১০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে এবং পরমাণু স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার বিরুদ্ধে ইরানে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হয়েছে। তেহরান, শিরাজ, তাবরিজ, ইস্ফাহানে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভে ইরানের প্রধান বিচারপতি, আইআরজিসির সাবেক প্রধান, মন্ত্রীরা এবং উপ-স্পিকার অংশগ্রহণ করেন বলে জানায় জামারান নিউজ।

একই সঙ্গে কূটনীতিতেও সক্রিয় হয়েছে ইরান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তির সঙ্গে আলোচনা করেন, যিনি পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে কথা বলেন। তুরস্কও মধ্যস্থতায় এগিয়ে এসেছে; প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

আরাঘচি এরপর জেনেভায় যান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং ইরান-সমর্থিত সংগঠনগুলোর অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাব তোলা হয় বলে জানায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

তবে ইরান তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। আরাঘচি বলেন, “ইসরায়েল পুরোপুরি হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো আলোচনা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনা হবে না।”

তবে জেনেভায় বৈঠক শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেন, “আলোচনায় ভালো ফলাফল হলো। আমরা এমন একটি অনুভূতি নিয়ে বৈঠক কক্ষ ত্যাগ করছি যে, ইরান গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে আলোচনা চালিয়ে যেতে মৌলিকভাবে প্রস্তুত।” ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারোও বলেন, “আমরা আশা করি ইরান আলোচনায়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও, উন্মুক্ত মনোভাব দেখাবে, যেন সংলাপের মাধ্যমে সংকটের একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়।”

এদিকে ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত হামলায় যুক্ত হোক। ট্রাম্পের দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার সিদ্ধান্তে হতাশা দেখা দিয়েছে ইসরায়েলি নেতৃত্বে। হারেৎজ পত্রিকার বিশ্লেষক গিডিওন লেভি আল জাজিরাকে বলেন, “যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হোন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

📰 www.deeptobangladesh.com
June 21, 2025

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতানিয়াহু, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তীব্রতর

<< বিস্তারিত কমেন্টে >>