ব্যাংক গ্রাহকদের ৫০ কোটি টাকা গায়েব

✍️ প্রতিবেদক: দীপ্ত বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক

কেরানীগঞ্জের আটিবাজারের সাউথইস্ট ব্যাংকের শাখা থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন ওই শাখায় কর্মরত এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফুল ইসলাম। টাকাগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সম্প্রতি জানাজানি হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

রোববার (৩০ নভেম্বর) সকালেও বহু গ্রাহককে ওই ব্যাংক শাখায় ভিড় করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ তাদের ব্যালেন্স চেক করে স্বস্তি পেলেও অসংখ্য গ্রাহক তাদের অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য অথবা বন্ধ দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সোহাগ আত্মগোপনে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি রাজধানী মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকার মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে।

ব্যাংকের অডিট ইনভেস্টিগেশনের প্রধান রেজাউল কবির জানান, ব্যাংক আইনে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোনো গ্রাহকের টাকাই খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ঠিক কত টাকা ব্যাংক থেকে সরানো হয়েছে, তা তদন্ত করে বলা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় থেকে দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সুমন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তার অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা থাকলেও এদিন এসে দেখেন তা শূন্য। ঘাটারচরের নুরুদ্দীন নামে একজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, তার অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থাকলেও এখন মাত্র ৪ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। এছাড়া, গ্রাহক নজরুল ইসলাম জানান, তার হিসাবে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা থাকলেও সেখান থেকে টাকা উত্তোলনের এসএমএস পান এবং পরে জানতে পারেন অনেকের মতো তার টাকাও উধাও। বসিলার মোক্তার হোসেন মুক্তির মেয়ে জানান, তার বাবার ৩টি হিসাব থেকে প্রায় এক কোটি টাকা লাপাত্তা হয়ে গেছে। আরেক গ্রাহক আখি আক্তার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, তার হিসাব থেকে টাকা না গেলেও অন্য গ্রাহকদের টাকা উধাও হওয়ায় তারাও চিন্তিত।

ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনা প্রসঙ্গে শাখার ম্যানেজার কার্তিক চন্দ্র হাজদার জানান, ব্যাংক হিসাব থেকে অনুমতি ছাড়া অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এই জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়ে এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও, ঘটনাটি নিয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ইন্টারনাল কন্ট্রোল ও কমপ্লায়েন্স বিভাগে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের অডিট টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, তারা ঘটনাটি শুনে প্রাথমিক তদন্ত করেছেন। তবে ব্যাংক থেকে কেউ এখনো মামলা করতে আসেননি। ব্যাংকের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তারা পরে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *