হেফাজতের সমাবেশে আপত্তিকর বক্তব্য: দুঃখপ্রকাশের সঙ্গে পাল্টা বার্তা

৩ মে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়ন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিতর্কের জেরে সংগঠনটি দুঃখপ্রকাশ করেছে। তবে সেই সঙ্গে তারা সেক্যুলার ও প্রগতিশীল ঘরানার সমালোচনারও জবাব দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “আমাদের মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দুজন বক্তা আপত্তিকর শব্দচয়ন করেছেন, যা হেফাজতে ইসলাম সমর্থন করে না। কেউ এতে আহত হয়ে থাকলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তবে বিবৃতিতে হেফাজত আরও দাবি করে, তাদের অবস্থানকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং দীর্ঘদিন ধরে ‘আলেম-ওলামাবিদ্বেষী’ প্রচারণা চালিয়ে আসছে কিছু সেক্যুলার-প্রগতিশীল গোষ্ঠী। আজিজুল হক বলেন, “আমরা সেই সব প্রগতিশীলদেরও আহ্বান জানাই, যারা আলেম-ওলামাদের দীর্ঘদিন ধরে ‘জঙ্গি’, ‘মৌলবাদী’, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে আক্রমণ করে আসছেন—তাঁরাও যেন সংযমী হন।”

তিনি উল্লেখ করেন, নারীর প্রতি হেফাজতের ঘৃণার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং তারা বিশ্বাস করে, মতাদর্শগত লড়াইকে ‘নারীবিদ্বেষ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। “আমরা নারীর ধর্মীয় অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় সংস্কারে অংশ নিতে আগ্রহী। কিন্তু শুরুতেই আলেম-ওলামাদের বাদ দিয়ে একদল এনজিও-সমর্থিত নারীবাদীদের নিয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে যে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, তা একচেটিয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট,” বলেন তিনি।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের নারী কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রতিবছর ছাত্রীসংখ্যা বাড়ছে এবং এসব মাদ্রাসা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ না নিয়েও এসব প্রতিষ্ঠান দেশের নারী শিক্ষায় অবদান রাখছে বলে দাবি করেন আজিজুল হক।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ধর্মীয় ইস্যুতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও ইসলামবিদ্বেষী অপপ্রচারে আমরা চুপ করে থাকবো না। আমাদের বিরুদ্ধে যারা ‘নারীবিদ্বেষী’ অপবাদ দিচ্ছেন, তাঁরা মূলত পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর হাতিয়ার।”

উল্লেখ্য, সমাবেশে বক্তৃতার সময় দুটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে নারী ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা হয়। এরপর এনসিপির তিন নারী নেতা ও আরও তিনজন হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠান, যার প্রেক্ষিতেই এই বিবৃতি আসে।

এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ কতটা আন্তরিক এবং তারা ভবিষ্যতে বক্তব্যে সংযমী হবে কি না, তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

📰 www.deeptobangladesh.com
May 6, 2025

হেফাজতের সমাবেশে আপত্তিকর বক্তব্য: দুঃখপ্রকাশের সঙ্গে পাল্টা বার্তা

<< বিস্তারিত কমেন্টে >>