ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় অন্তর্বর্তী সরকারে অস্থিরতা

✍️ প্রতিবেদক: দীপ্ত বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকার অস্থির হয়ে পড়েছে। ১০ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই তার নেতৃত্বাধীন সরকার গভীর সংকটে পড়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ইঙ্গিত জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে, সরকার নির্বাচন নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের কথা বললেও নির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা তারিখ ঘোষণা করেননি, ফলে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। বিশেষ করে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ দাবি করে আসছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

এই পরিস্থিতিতে রাজপথে কর্মসূচি ও আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে আটদিন আন্দোলন চলে এবং বৃহস্পতিবার (২২ মে) ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। একই দিন হাইকোর্ট ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের গেজেটের বৈধতা এবং শপথ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করেন। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ছাত্রদল শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালায়, যা পরে স্থগিত হলেও দাবিপূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়।

বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে নির্বাচন, রাখাইন কোরিডোর এবং মব সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং জানান, নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়া উচিত। রাখাইন কোরিডোরবিষয়ক সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আসা উচিত বলে মত দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা শোনা যায়। সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন এবং রাতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনৈক্য, একাধিক আন্দোলন, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও নির্বাচনের দাবিতে অতিরিক্কাত চাপের কারণে ড. ইউনূস দায়িত্ব চালিয়ে যেতে আগ্রহী নন। এসব বিষয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি তুলে ধরেন।

শুক্রবার (২৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন না। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত ক্ষমতার প্রয়োজন নেই, তবে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য তার প্রয়োজন রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন, সরকার দ্রুত নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অতিরিক্ত দায়িত্ব নিচ্ছে, সংস্কার, বন্দর ব্যবস্থাপনা, রাখাইন কোরিডোরসহ নানা কাজে হাত দিয়েছে, যা তাদের দায়িত্ব নয়। ফলে সংকট তৈরি হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. ইউনূসের পদত্যাগ বিএনপির দাবি নয়, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। বিএনপির প্রধান দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা। দলটি স্পষ্ট করেছে, রোডম্যাপ ছাড়া তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে না।

বিএনপি আরও দাবি জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, তাদের অব্যাহতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অপসারণ। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর থেকে বিএনপির সমর্থন চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা বেড়েছে। উপদেষ্টাদের মধ্যেও একই ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ বিএনপি ছাড়াও ডান-বাম বিভিন্ন দল তাদের সঙ্গে রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে, সরকারের তিনটি কঠিন দায়িত্ব—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—তবে সব দায়িত্ব পালন করা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

📰 www.deeptobangladesh.com
May 24, 2025

ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় অন্তর্বর্তী সরকারে অস্থিরতা

<< বিস্তারিত কমেন্টে >>